কে সেরা? বিরাট কোহলি না বাবর আজম? ব্যাটার হিসেবে কে বড়? কার ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা, সামর্থ্য বেশি? তা নিয়ে রাজ্যের কথাবার্তা। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, জল্পন-কল্পনার অন্ত নেই।
ভারীয় ক্রিকেট ভক্তদের বিশ্বাস, বিরাট কোহলিই ব্যাটার হিসেবে বড়। তার স্কিল, টেকনিক, টেম্পরামেন্ট, শটের স্টক বেশি। শটস খেলায় পারদর্শিতা ও ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা প্রচুর।
অন্যদিকে পাকিস্তানিরা বাবর আজমকেও পিছিয়ে রাখতে নারাজ। তাদের ধারণা, কম যান না বাবরও। টেকনিক, স্কিল দুর্দান্ত, রানের ফলগুধারা বইয়ে ম্যাচ জেতানোয় বাবর আজমও যথেষ্ট পারদর্শী।
সন্দেহ নেই দুজনই স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। রান করা আর ম্যাচ জেতানোয় দুজনারই ট্র্যাক রেকর্ড বেশ। তবে ভারত আর পাকিস্তান ম্যাচে নিজের স্নায়ু ঠিক রেখে ম্যাচভাগ্য গড়ে দেওয়ার মত ব্যাটিং করা সহজ কাজ নয়।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ তো শুধু একটি ম্যাচই নয়, মর্যাদার লড়াই। এখানে শুধু ব্যাট আর বলে কথা হয় না। হয় মুখের কথার লড়াই আর মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষাও।
যদিও আগের সেই মারমার-কাটকাট অবস্থা বা যুদ্ধাংদেহী মনোভাব হয়তো নেই। উত্তেজনা থিতু হয়েছে অনেকটাই। তারপরও ভারত ও পাকিন্তান ক্রিকেট ম্যাচ শুধু ক্রিকেট নয়। ক্রিকেট ছাপিয়ে অন্য কিছু। যার পরতে পরতে উত্তেজনা। বাড়তি আকর্ষণ, স্লায়ুর লড়াই।
সে স্নায়ুর লড়াইয়ে নিজেকে ঠিক রেখে স্বাভাবিক ব্যাটিং করাটা সহজ নয়। বিরাট কোহলি আর বাবর আজমের কে জায়গামত নার্ভ ঠিক রেখে করণীয় কাজটা খুব দক্ষতার সাথে করতে পারবেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার কার্যকরিতা বেশি থাকবে, সেটাই দেখার।
ওপরের কথাবার্তা শুনে হয়তো কেউ কেউ ফোড়ন কাটছেন, বিরাট কোহলি আর বাবর আজমই বুঝি শেষ কথা? ভারত-পাকিস্তান মহাদ্বৈরথে কি আর কারো ভূমিকা নেই? রোহিত শর্মা আর মোহাম্মদ রিজওয়ান কি কম? তাদের উইলোর দাপটও যে অনেক।
নিজের দিনে রোহিত শর্মা বিশ্বের যে কোনো বোলিং শক্তিকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। দিয়েছেনও অনেক। ভারতের অনেক বড় বড় সাফল্য এসেছে এখনকার ভারত অধিনায়কের চওড়া ব্যাটে।
আর মোহাম্মদ রিজওয়ানতো পাকিস্তানের এখনকার অন্যতম নির্ভরতা। ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের শেষ দুই টি-টোয়েন্টি জয়ের অন্যতম রূপকার, স্থপতি রিজওয়ান। তার ব্যাটেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে শেষ তিন মোকাবিলায় দুটিতে জিতেছে পাকিস্তান। কাজেই বিরাট কোহলি আর বাবর আজমই শেষ কথা নয়। এর বাইরেও কথা আছে।
গল্পের ভেতরেও যেমন গল্প থাকে, বিরাট কোহলি আর বাবর আজমের লড়াইয়ের ভেতরেও তেমনি লড়াই আছে। সে লড়াই শাহিন শাহ আফ্রিদি-হারিস রউফ বনাম রোহিত শর্মা আর সূর্যকুমার কুমার যাদবের লড়াই। সে লড়াই রিজওয়ান আর ভুবেনেশ্বর কুমারের। হার্দিক পান্ডিয়া, মোহাম্মদ শামি আর মোহাম্মদ নওয়াজেরও। সে লড়াইয়ে জিতবে কারা? আসলে তার ওপরই নির্ভর করবে ম্যাচের ভাগ্য।
ইতিহাস জানাচ্ছে, শেষ তিন মোকাবিলার দুটিতে পাকিস্তান জিতেছে। আর ভারত জিতেছে একবার। তিন খেলাতেই পরে ব্যাট করা দল হেসেছে শেষ হাসি। এবং শেষ লড়াইটি ছাড়া প্রথম দুটিতে জয়ের নায়ক দুই দলের ফাস্টবোলাররা।
২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর দুবাইতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহিন শাহ আফ্রিদির এক বিধ্বংসী স্পেলে (৪ ওভারে ৩/৩১) ভারতের টপঅর্ডার ভেঙে চুরমার হয়েছিল। স্কোরবোর্ডে ৩১ রান জমা হতেই ভারতের তিন টপ অর্ডার রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল আর সূর্যকুমার সাজঘরে।
শাহিন আফ্রিদি নিজের প্রথম ২ ওভারে রোহিত আর রাহুলকে সাজঘরে ফেরত দেন। ওই ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়েও বিরাট কোহলি একা লড়াই করেন খানিকক্ষণ। কিন্তু শাহিন আফ্রিদিরর বাধার মুখে তাকেও থামতে হয়। ১৫১ রানে আটকে থেকে (৭ উইকেটে ) বিশাল ব্যবধানে হারে ভারত। মোহাম্মদ রিজওয়ান (৫৫ বলে ৭৯) আর বাবর আজম (৪২ বলে ৬৮) অবিচ্ছিন্ন ১৫২ রান তুলে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের উদ্ভাসিত জয় উপহার দেন।
এ বছর এশিয়া কাপে দুইবারের সাক্ষাতেও আগে ব্যাটিং করা দল হেরেছে। প্রথমবার ম্যাচ জয়ের নায়ক বোলাররা। ২৮ আগস্ট আগে ব্যাট করে পাকিস্তান অলআউট হয়েছিল ১৪৭ রানে।
পাকিস্তানীদের সর্বনাশ নেমে আসে ভারতের দুই ফাস্টবোলার ভুবেনেশ্বর কুমার (৪/২৬) আর হার্দিক পান্ডিয়ার (৩/২৫) ধারালো বোলিংয়ে। তারপরও ওই সামান্য কটা রান করতেই ভারতের নাভিশ্বাস উঠেছিল। বল হাতে পাকিস্তানের মেরুদন্ড ভাঙার পর শেষদিকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ভারতকে দারুণ জয় উপহার দেন হার্দিক পান্ডিয়া (১৭ বলে অপরাজিত ৩৩)।
একইভাবে ৪ সেপ্টেম্বর দুবাইতে ফিরতি ম্যাচে পাকিস্তান ৫ উইকেটে জেতে। সেটা অবশ্য ছিল হাই স্কোরিং গেম। বিরাট কোহলির চওড়া ব্যাটে (৪৪ বলে ৬০) ভারত পেয়েছিল ১৮১ রানের বড় পুঁজি।
কিন্তু রিজওয়ানের (৫১ বলে ৭১) দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের সাথে বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজের ঝড়ে (২০ বলে ৪২) পাকিস্তান পায় ৫ উইকেটের জয়।
এখন দেখার বিষয়, এবার কী হয়! আবারো দুই দলের ফাস্টবোলারা প্রথম সেশনে জয়ের ভিত রচনা করে দেবেন? নাকি বিরাট, রোহিত, সুর্য কিংবা রিজওয়ান-বাবররা ম্যাচ শেষ করে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরবেন?
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম