সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: মানবদেহে ভয়াবহ প্রভাবের আশঙ্কা
সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইডে মানবদেহ ও পরিবেশের ওপর প্রভাব হবে ভয়াবহ। চিকিৎসকরা বলছেন, রাসায়নিকের শরীরে ঢোকা মাত্রই শ্বাসকষ্ট, অভ্যন্তরীণ প্রদাহ, এমনকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকলও হতে পারে। আর পরিবেশবিদরা বলছেন, ছড়িয়ে পড়া এলাকার বায়ু, পানি ও মাটি মুহূর্তেই দূষিত হবে।
সীতাকুণ্ডের বাতাস, মাটিতে এখন বিষাক্ত হাইড্রোজন পার অক্সাইডের উপস্থিতি। অত্যন্ত দাহ্য রাসায়নিক মানুষের নিঃশ্বাসে প্রবেশ করামাত্রই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট, এরপর রক্তে মিশে যাওয়ামাত্রই অভ্যন্তরীণ দাহ।
শরীরে অক্সিজেনের তীব্র সংকট শুরু হতেই একের পর এক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে থাকে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পাওয়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নিয়ে এমন শঙ্কা জানালেন চিকিৎসকরা।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান বলেন, সবচেয়ে খারাপ বার্ন হলো কেমিক্যাল বার্ন যা আমদের শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হলে এজেন্ট হিসেবে রক্তের মধ্যে গিয়ে যেমন ক্ষতি করছে তেমনি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে রেসপুরেটরি সিস্টেম আছে সেখানে যে বার্ন হয় সেটাতে রোগীর ভয়াবহতা বেড়ে যায়। তখন দেহের বিভিন্ন অর্গান ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, এতে অনেকে মারা যেতে পারে।
শুধু মানুষের শরীরেই নয়, ভয়ংকর রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপরও। বিস্ফোরণের ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে মিশে যাওয়া রাসায়নিকটির মাধ্যমে দূষিত হবে সেখানকার বায়ু, মাটি। এমনকি পানিতে মিশলে দূষিত হবে তাও।
বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, প্রচণ্ড গরম ছিল ওখানে। ফলে রাসায়নিক যদি বাষ্প হয়ে যায় তাহলে বাতাসকে দূষিত করে। এর ফলে পরিবেশ দূষিত হয়।
কনটেইনার ডিপোগুলোতে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সঠিক নীতিমালা তৈরি হয়নি বলে জানালেন বুয়েটের এ কেমিকেল বিশেষজ্ঞ।
ইয়াসির আরাফাত খান আরও বলেন, আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। সেই সঙ্গে রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার যে গাইডলাইন থাকা দরকার সেটাও নেই।
সীতাকুণ্ডের মতো ঘটনা ঘটতে পারে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল কিংবা ঢাকাতেও। এমনটা জানিয়ে এখনই রাসায়নিকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএস ডিপো নামের কনটেইনার টার্মিনালে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণ স্থলে ৫০০ মিটার টিনের শেডের ভেতরে শত শত হাইড্রোজন পার অক্সাইড রাসায়নিকের ড্রাম বিস্ফোরক হয়ে আশাপাশের ৫ কিলোমিটার পযন্ত ছড়িয়ে পড়ে।